Skip to main content

Posts

বসতবাড়িঃ উত্তরসুরীর কাছে নাম না জানা পূর্বসূরীর ভিটাপত্র

কিছুদিন আগে Context BD পূর্বপুরুষের ঘরবাড়ি নিয়ে উত্তরপুরুষকে চিঠি- এই ধরনের একটা লেখা সংগ্রহের ক্যাম্পেইন চালায়। অত্যন্ত আগ্রহ নিয়ে চিঠি লিখতে বসি। কিন্তু মনের সুখে লিখতে লিখতে শেষ হলে শব্দ গুনে দেখি শব্দের বন্ধনী পার হয়ে দ্বিগুন তিনগুন চলে গেছি। বেশি কথা বলা অভ্যাস। থামতেই যে পারিনা। তাই সেটা আর জমা দেয়া হল না। গতকালকে সেটা প্রকাশিত হতে শুরু করেছে।   প্রিয়”, আমি জানি না তুমি আমার কততম প্রজন্মের উত্তরসূরী। আমার জানা নেই দুনিয়ার কোন জানা বা অজানা বা চেনা বা অচেনা মাটির বুকে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করার বিধি আমার ভাগ্যনামায় লেখা ছিল। আমি জানি না কোন মাটির গন্ধ নাকে নিয়ে বা কোন আকাশের তারার দিকে তাকিয়ে শেষবার বুকভরে শ্বাস নেব। আমি আমার কল্পনায় ভাবি, তুমি হয়তো কোন তারার দিকে তাকিয়ে খুজে বেড়াও সেই মাটির গন্ধ যেখানে তোমার পূর্বপুরুষের ভিটামাটি ছিল একদিন। হয়তো তোমার মনে প্রশ্ন আসে সেই ভিটেমাটির উপর আছড়ে পড়া বর্ষার জল কতটা স্বচ্ছ। কিংবা কে জানে হয়তো তুমি দূরের কোন গ্রহে বসে তোমার সেই রঙ না জানা আকাশে মিটিমিট করে জ্বলা তারাগুলির মাঝে আমার তোমার প্রশ্নগুলি মিলে মিশে একাকার হয়। গিরিবাজ পায়রার ডিগবা...
Recent posts

ভারতকল্প ৩.২- ভুতুড়ে স্বাধীনতা (২)

মর্গ থেকে বেড়িয়ে গাড়ির ভেতরে সবাই একটু ঘোরগ্রস্থ। একই নেটওয়ার্কে চারটা মোবাইলের আলাদা জিপিএস আমাদের হার্টবিট বাড়িয়ে দিচ্ছে। পিউলির অবশ্য এক্সেলারেটরের পা উঠে যায় নি। গাড়ি চলছেও সেই ঘোরের মধ্যেই। এর মধ্যে জানে পানি আসার মত জিপিএস ঠিকমত লোকেট করে ফেলল সবাইকে। রেডিও সিগনাল ও ফেরত এসেছে। মর্গ এর ব্যাপারটা ভুলে থাকার চেষ্টা করতে করতে জায়গামত এসে পৌছে গেলাম আমরা। এই সেই জাপানী ভদ্রলোকের বাগান। দেখে মনে হয় ইঞ্চি ইঞ্চি করে তৈরি করা। অথচ প্রকৃতি থেকেও আলাদা হয়ে যায় নি। আর ওই দূরে ভারত মহাসাগরের কাচের মত নীলাঞ্জনা হীরার মত পানি! এক চিলতে সাগরপাড় দেখা যাচ্ছে। বহু বহু নিচে! সেখানে কষ্টিপাথরের মত শৈবাল থেকে আসা কাল পাথর জমাট বেধে আছে কিছু। এই দেখতেই না এতদূর এত পথ ঘুরে আসা! সাগরপাড়ে নেমে যাওয়ার সেই ভয়াল রাস্তা!  নিচে নামার ব্যাপারটা অবশ্য নিজেই একটা আলাদা জার্নি। আড়াই ফিট চওড়া সিড়ি আছে একটা। তাঁর কোন রেলিং নেই। ঘুরে প্যাচ খেয়ে নেমে গেছে সৈকতে ঠিকই। তবে তাঁর পরতে পরতে আবার ছোট ছোট এডভেঞ্চার! কোথাও পাথর কেটে দরজা তৈরি করে চলে গেছে সিড়ি, তো কোথাও সিড়ির দুইপাশে আগুনে পুড়ে যাওয়া গাছের ছা...

৪০৯ বসন্তের নগরী । হারানো নদীপাড়ের একাকী মসজিদ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ আর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের মানুষের দৈনন্দিন খানাপিনার একটা জায়গা আছে। বকশীবাজার। রোগীর স্বজনের শংকা, ছাত্র-ছাত্রীদের কলরব, জীবনের আশা, খাবারের ঘ্রাণ আর কংক্রিটের জঞ্জাল এর শহরে উঠে যাওয়া ফ্লাইওভার- বকশীবাজার সরগরম থাকে প্রায় ২৪ টা ঘন্টাই। আমার কাছে বকশীবাজার অবশ্য একটা অলিখিত সীমান্ত। পুরাতন আর নতুন ঢাকার সীমান্ত। একসময় আধুনিক নগর পরিকল্পনার সাথে তাল রাখতেই শহরের বাইরে বিশ্ববিদ্যালয় আর সার্ভে স্কুল করেছিল বৃটিশ সরকার। কিন্তু ঢাকার বেড়ে ওঠার অস্বাভাবিক গতি বকশীবাজারকে বানিয়ে দিয়েছে ঢাকার নিতান্ত সাধারণ একটি মোড়। তবে ঢাকা শহর কেমন? এই প্রশ্নের উত্তর এখনো বকশীবাজার পার হয়ে চকবাজারের দিকে একরকম আর পলাশী হয়ে নিউমার্কেট এর দিকে গেলে আরেক রকম। এটাই পুরাতন ঢাকা আর নতুন ঢাকা। এটাই ঐতিহ্যবাহী নগর আর আধুনিক মেগাসিটির মধ্যে সেই সীমান্ত। সীমান্তটা আজকের দিনে নিতান্তই মানসিক। এই মানসিক সীমানার প্রভাব অবশ্য পুরান ঢাকার বাসিন্দারা বেশ ভালভাবে লালন করেন মনে। ঢাকার নতুন শহরে ওই মানসিকতা তো বহুদূরের ব্যাপার, শহরের গঠন এতটাই আলাদা হয়ে ধরা দেবে যে চোখ একটা...

ভারতকল্প ৪- কালকা, আজকে এবং কালকে!

জানুয়ারী ২৯,২০১৭, শ্যামলী, ঢাকা। দুপুর সাড়ে ৩ টা। অনিশ্চয়তা। “ধুর ব্যাটা, তুই যদি ট্রেনটাই মিস করলি তাহলে তো বিশাল একটা জিনিস কোনদিন জানলিই না” প্রত্যয় ভাই যখন শ্যামলীতে আমাকে এই কথাগুলো বলছেন তখনো আমার ভিসা নিয়ে ঘোর অনিশ্চয়তা। বিশাল মানসিক অশান্তি চলছে মনের মধ্যে এটা ভেবে যে, জীবনের সবচেয়ে বড় জার্নিতে অন্য সবার সাথে শুরু করার ব্যাপারটা আমার নাও হতে পারে। কোথাকার কোন ট্রেন মিস হয়ে যাবে এই চিন্তা তখন অনেক দূরের ব্যাপার। ফেব্রুয়ারী ১,২০১৭। হাওড়া। কলকাতা। রাত ৮ টা। দেরী। অনেক আগে ছোট থাকতে আব্বুর মুখে শুনতাম কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশান চালু হবার পর ঢাকার অলিতে গলিতে এক শহুরে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। সেই গুজব হচ্ছে কমলাপুর স্টেশান এশিয়ার সবচেয়ে বড় স্টেশান। সেই গুজব এর অবসান কীভাবে হয়েছিল আমার জানা নেই। তবে কমলাপুর স্টেশানকে আদতেই বড় স্টেশান ভাবার মধ্যে যে সীমিত জ্ঞানগত ভুল আছে তা আমার ভেঙ্গে গেল এই সন্ধ্যায়। ভারতবর্ষে আগে আসা হলেও হাওড়া স্টেশান আগে দেখার কোন কারণ হয় নি। কলকাতাবাসী অবশ্য দাবী করেনা দেরী। এশিয়ার সবচেয়ে বড় স্টেশান। তবে সন্দেহাতীতভাবে হাওড়া ভারতবর্ষের সবচেয়ে বড় রেলওয়ে বিশ্রামাগার...

ভারতকল্প ৩.১- ভুতুড়ে স্বাধীনতা!

চন্ডীগড় শহরে স্থাপত্য দেখার ব্যাপারটা প্রায় কর্তব্য। সেই কর্তব্য পালনের ছকের মধ্যে আরেক কর্তব্য ছিল সেখানকার আর্কিটেকচার স্কুল ঘুরে দেখা। এই দেখার ফাকে একজন শিক্ষক জানতে চেয়েছিলেন- “এই যে ৪০-৪২ দিনের ভারত দেখে বেড়ানোর বিশাল আয়োজন, এর মধ্যে কোন শহরে কতদিন বরাদ্দ?” ৪০ দিনের বাধা ছকে গোয়া’র জন্য বরাদ্দ পাঁচদিন শুনেই মুখ টিপে হেসেছিলেন অনেকে। গোয়া যেন ভারত মহাসাগরের তীরে স্বাধীনতার ডাক (ছবিঃ সেহরান পারভেজ সিয়ান) আমরা ভারতবর্ষে প্রথম ঘুরতে আসা স্থাপত্য ব্যাচ নই। এই ঐতিহ্য ঠিক কতদিনের পুরাতন তা নিয়ে বেশ একটা ধোয়াশা আছে। তবে বছরের হিসাবে ৩০ এর কম তো নয় ই। এমনকি আমাদের সবচেয়ে প্রবীণ শিক্ষক ও তার ভারতভ্রমণ এর রেফারেন্স টানেন ঐতিহাসিক স্থাপত্য পড়াতে। গোয়া শহর নিয়ে শুধু চন্ডীগড়ের শিক্ষকেরা নন শুধু আমাদের নিজেদের মধ্যেও বাড়তি উত্তেজনা স্পষ্ট। গোয়া হচ্ছে- স্বাধীনতার নগর! মুম্বাই এর মত কসমোপলিটান নয়, কক্সবাজারের মত বিশ্বের বৃহত্তম সৈকত ও নয়, গোয়া শহর এর স্বাধীনতা একটা সাগরকণ্যা ছোট শহরে দাঁড়িয়ে সাগরপাড়ের জীবনের সর্বোচ্চ স্বাধীনতার হাতছানি! কী না কী হবে সামনে! কত কত গল্প শুনে যাচ্ছি, তা...

৪০৯ বসন্তের নগরী । প্রথম পর্ব । রূপলালের জলসায়

অনবরত স্কেচবুকের পাতায় মসৃন পাশে পেন্সিল ঘষে যাচ্ছি। কাজটায় কেমন একটা অতৃপ্তি আছে। পেন্সিল চলার কথা কাগজের অমসৃণ পাশে। সামনে “বেংগল আর্কিটেকচার” এর ক্লাস চলছে। প্রফেসর অনেক আগ্রহ নিয়ে বলে যাচ্ছেন কিছু একটা। মনোযোগ নেই আমার তেমন। আমি ভয়াবহভাবে অন্যমনষ্ক। অন্যমনষ্কতার মধ্যে অন্যমনষ্কতা বলে কোন ব্যাপার আছে কীনা জানি না বা মূহুর্তকালের জন্য মনোযোগ ফেরত আসার মত একটা সময়ে কয়েকটা কথা কানে ঢুকে গেল- “বুড়িগঙ্গা নদীতে শুধু বিলাস জাহাজ নয়, বাণিজ্যিক জাহাজ ও ঢুকত সে সময়ে। জাহাজিরা মুগ্ধ হয়ে যেত চারটি আলাদা ঘাটসহ বাড়িটার চেহারা দেখে। আর্মেনিয়ান, বৃটিশ আর ঢাকার ক্লাসিক চেহারা মিলিয়ে সে বাড়ি আসলেই ছিল দেখার মত। ক্লাসিক আর্কিটেকচার পড়িস? মুগ্ধতা আসে গোথিক বা রোমান বিল্ডিং এর চেহারা দেখে? চিন্তা করে দেখ ওই সাদা চামড়ার ইউরোপিয়ানরা মুগ্ধ হত এই বাড়ি দেখে। কিন্তু তোরা যেন কেমন। কোন কিছুতেই অবাক হস না।“ কোন সে বাড়ি যেটা বুড়িগঙ্গার পাশ দিয়ে দেখা যায়? আমার পাশে পুরাতন ঢাকার ইফতি বসে আছে। ওকে পেন্সিলের মাথা দিয়ে হালকা গুতা দিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম- -এটা কই রে? -ফরাসগঞ্জে। শ্যামবাজারের দিকে। -অনেক বড় বাড়ি ...