১০ দিন আগে মানালিতে মাইনাস ১৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পাচ ছয়টা জ্যাকেট পড়ে
কাঁপাকাঁপি চলছিল। মাত্র ১০ দিন! বাসের জানালার বাইরে এখন সোনালি আভা চকচক করছে।
হাফ হাতা টি শার্ট পড়ে এসির বাতাসে কাঁপছি একটু একটু ঠিকই। কিন্তু সোনালী রোদ আর
বালু মিলে মিশে চোখের দেখার জন্য পরিবেশ তৈরি করছে তাতে ঠান্ডার লেশমাত্র নেই।১০
দিনে বরফ থেকে মরু চলে আসার ব্যাপারটা এতটাই আশ্চর্যজনক যে, শত চিন্তা করে
ভারতবর্ষ কত বড় ব্যাপারটা মাথায় ঢুকতে চেয়েও চায় না। পথে কোন জনমানব নেই। জীবনের
অস্তিত্ব জানান দিতেই মাঝে মাঝে দুই চারটি মরুভূমির ছাগল উকি দিচ্ছে বাসের
আশেপাশে। আমি আগে কখনো মরুভূমি দেখিনি। জীবনে এই ই প্রথম। ধূ ধূ সোনালী প্রান্তর এ
হারিয়ে যাচ্ছে দৃষ্টি আর চিন্তার সীমানা। দু চারটা কাঁটা জাতীয় গাছের অস্তিত্ব সেই
পথে বাধা দিতে পারছে না।
রাজস্থান এর সাথে আমার পরিচয় “হঠাৎ বৃষ্টি” ছবির সাথে সাথে। লাল পাগড়ি পড়া ফেরদৌস এর উটে চড়ে যাওয়া আর “সোনালি প্রান্তরে, ভোমরার গুঞ্জনে...” গানে আমার বয়সীরা তো বটেই, সব বয়সের বাঙ্গালীর জন্যই রাজস্থান একটা রোমান্টিক স্বপ্নের মত। আমার মনে সেই সিনেমা থেকেই অনেক অনেক প্রশ্ন। আসলেই কি রাজস্থানে খোলা আকাশের নিচে ঘরের ছাদে মানুষ থাকে বিছানা বিছিয়ে? ঐ সোনারঙ্ এর পাথর কি আসলেই আছে, যেগুলো দিয়ে ঘর বানায় রাজস্থান এর লোকেরা? রঙ নিয়ে রাজস্থান এর অবশ্য অদ্ভুত একটা ব্যাপার আছে। রাজস্থান এর মূল দর্শনীয় শহর তিনটি। গোলাপী রঙ এর প্রথম শহরের নাম জয়পুর। আর এর পরের শহর নীলরঙ্গা যোধপুর। ছোট্ট একটি শহর। একদিনে ঘুরে শেষ করে ফেলতে হবে। আমাদের বাস তাই রাতভর ছুটে চলবে যোধপুরের পথেই। সকাল সকাল যোধপুর নেমে ভ্রাম্যমাণ ফ্রেশ হওয়া।
পশ্চিমাদের
কাছে উপমহাদেশ মানেই মশলাদার খাবার। সারা ভারত জুড়েই তাঁদের মানসপটের খাবারে শুধুই
মশলা। তাঁদের চোখে বাংলাদেশও উপমহাদেশ, পাকিস্তানের পেশওয়ারও উপমহাদেশ। কিন্তু
বাংলাদেশী মুখে যে ভারতীয় মশলা রুচে না। রাজস্থান আসার আগে থেকে ভয়ে ছিলাম যে
এখানকার মশলার সাথে মুখের সম্পর্ক কেমন হবে। এই ভয়েই কী না বাসে বসে “লোনলি
প্লানেট” খুজে দেখলাম ভাল খাবার কী আছে। খুজতে খুজতে খোজ মিলল রাজস্থানের বিখ্যাত
“রাবড়ি” এর। পাওয়া যায় কোথায়? ক্লক টাওয়ারের পাশে! চারদিকে ঘিরে রয়েছে সদর
মার্কেট! ছোট শহরের হৃদস্পন্দন। মশলা, সবজি, মিষ্টি, গালিচা, কারুশিল্প কী নেই
সেখানে! স্থাপত্যের ছাত্র বলে খুজতে গেলাম ছবি আকার স্কেচখাতা। রীতিমত গ্যারান্টি
দিয়ে উটের চামড়ার স্কেচবুক ধরিয়ে দিল। পরে জেনেছিলাম উটের চামড়া দিয়ে কিছুই বানানো
যায় না প্রায় এর শক্ত ও ভাজ করতে না পারা ধরনের কারণে। লোনলি প্ল্যানেট এর
রিকমেন্ড করা দোকানে গিয়ে স্বাদে হতাশ হয়েছি আগে বেশ কয়বার। তবে যোধপুর হতাশ করল
না। মুখে রাবড়ি এক চামচ দিতেই মনে হল মুখের ভেতর স্বাদে গলে গেল সব। এর সাথে আলাদা
করে যোগ করতে হবে রাজস্থান এর বিশাল সাইজ এর মরিচ এর বড়া! গোটা রাজস্থানেই নাশতার
দোকানে এই জিনিস এর দেখা মিলবে। কোথাও খেতে খারাপ না। কিন্তু সদর বাজার এর স্বাদ এখানে গোটা রাজস্থানকেই হারিয়ে দেবে।

সদর মার্কেট এর প্রবেশপথে রাজস্থানী ছাতার রঙিন দোকান (ছবিঃ সেহরান পারভেজ সিয়ান)
যোধপুর শহরটা একটা অদ্ভুত প্যারাডক্স। সকালে শহরে নেমে যখন তাড়াহুড়ো করে সদর বাজার এর দিকে আসি, মনের মধ্যে প্রথম যে ছবিটা আঁকা হয়েছিল সেটা আটপৌরে মধ্যবিত্ত এক শহরের। রাস্তায় গরু, ঘোড়া, গাড়ি, মানুষ, বাজার দোকান মিলে সে এক চলন্ত জলসা! কিন্তু রাজপুতদের অভিজাত একটা ছোয়া ছড়িয়ে যে আছে শহরজুড়ে সে আমেজ পাওয়া যায়। যোধপুরকে কেন নীল শহর বলা হয় সেটা বুঝতে আমাদের পাড়ি দিতে হয়েছিল বেশ খানিকটা পথ। ভারতের প্রতি শহরে একটা বড় দূর্গ রয়েছে। ইংরেজ আমল শুরু হবার আগের শাসকদের প্রতীক এই দূর্গগুলো। প্রতিটি দূর্গের নির্মানশৈলি আর চিন্তাধারা প্রত্যেক শাসকের সময়, মনোভাব আর বুদ্ধিমত্তার। যোধপুর শহর গড়ে তোলেন ১৭২৬ সালে মহারাজা দ্বিতীয় সোয়াই জয় সিং। তিনি ছিলেন আম্বের সাম্রাজ্যের শাসক। সাম্রাজ্যের লোকসংখ্যা বেড়ে যাওয়াতে সাম্রাজ্য স্থানান্তর করে আনেন যোধপুরে। তিনি “সোয়াই” উপাধিটি পেয়েছিলেন মুঘল বাদশা আওরংজেব এর নিকট থেকে। রাজপুতদের সাথে মুঘলদের দূর্গ বানানোর সবচেয়ে বড় পার্থক্য হল মুঘলরা যেখানে সমতলে বিশাল জায়গাজুড়ে শান শওকত আর স্কেল এর প্রদর্শনী করে দূর্গ বানাত সেখানে রাজপুতদের দূর্গ বানানোর স্টাইল অনেকটাই চাপা স্বভাবের। পাহাড়ের উপরে পর্যাপ্ত সমর রক্ষণ ও দূর্গম পথের বাধা যোগ করেই বানানো হত। যোধপুরের মেহেরানগড় দূর্গ ট্যুরিস্টদের সুবিধা মত পরিবর্তন করা হলেও রয়ে গেছে সেই ঢালু ও দীর্ঘ পাহাড়ি পথ। সেই পথ অতিক্রম করে যখন প্রথম যোধপুর শহর নজরে আসে চোখে পড়ে শুধু নীল!
মেহরানগড়
দূর্গের প্রবেশপথ হতে যতদূর চোখ যায় অনেক বাড়িঘর নীল রঙ্গে রাঙ্গানো। এই নীল রঙ
কেন করা হয় তাঁর বেশ কয়েকটা ব্যাখ্যা আছে। অনেকে প্রথম দেখায় দাবী করে বসেন যে
রাজস্থানে ট্যুরিজম বাড়াতেই এই ধরনের প্রকল্প নেয়া হয়েছিল। তবে সর্বাধিক সমর্থিত
সূত্র বলে রাজপূতদের শাসনামলে ধর্মভিত্তিক বর্ণপ্রথা যোধপুরে খুব শক্তভাবে খুঁটি
গেড়েছিল। ব্রাহ্মণেরা নিজেদের বাসভবনকে আলাদা করে তুলে ধরতেই প্রথমে নীল রঙ করা
শুরু করেন। পরবর্তীতে বর্ণপ্রথা একটু দূর্বল হয়ে গেলে আরো অনেকেই এই কাজ করতে থাকেন আস্তে ধীরে। এভাবেই সূর্যের শহর হয়ে যায়
নীলের শহর। অনেকে আবার বলে থাকেন, বৃটিশ আমলের আগে থেকেই এই অঞ্চলে নীল চাষ হত।
একসময় ভয়াবহ উইপোকার উপদ্রব শুরু হলে স্থানীয়রা আবিষ্কার করেন যে প্রাকৃতিক
নীলগাছের নীল রঙ উইপোকা ঠেকাতে সক্ষম। উইপোকা নাশ হয়ে গেলেও দেখতে সুন্দর লাগায়
নীল ঘরের ব্যাপারটা রয়ে যায়।

মেহরানগড় দূর্গের প্রবেশপথ থেকে যোধপুরের নীল (ছবিঃ নওফেল শরীফ সজল)
মেহরানগড় এর
সাথে অন্যান্য রাজপুত দূর্গের একটি বড় পার্থক্য হল এটি নির্মান হয়েছিল রাজপুতদের
সবচেয়ে সমৃদ্ধশালী সময়ে। মুঘলদের সাথে সকল ধরনের প্রতিকূলতা পার হয়ে দীর্ঘ কয়েক
যুগের শান্তি ও আনুগত্য এনে দিয়েছিল অভাবনীয় প্রতাপ ও সমৃদ্ধি। রাজপুত স্থাপত্যের
কারুকাজ, নকশা, আভিজাত্য ও শৌর্য্য সবই এই দূর্গে উপস্থিত নিজের সর্বোচ্চ নিয়েই।
যোধপুর শহর থেকে প্রায় ৪১০ ফিট উপর থেকে তাকিয়ে দেখার অভিজ্ঞতা বা দেয়ালজুড়ে
কামানের উপস্থিতি সাক্ষ্য দেয় রাজপুতদের রাজকীয় জীবনযাপনের।
শুরুতে একবার
বলেছিলাম যোধপুর প্যারাডক্স এর কথা। রাজপুতদের রাজকীয় জীবনের পাশাপাশি তুলনা করলে
সাধারণ মানুষের জীবন নিতান্ত সাধারণ। রঙ আর ট্যুরিস্টদের দেখানো সাজ সাজ চেহারার
পিছনে তারা প্রতিদিনের জীবনে খুবই মিশুক ও অতিথিপরায়ন। যোধপুরের নীল শহরে আমরা
হেঁটে বেরিয়েছি প্রায় দিশাবিহীন। সময় ও দিকের হিসাব বাদ দিয়ে কোন শহরে হারিয়ে যেতে
না পারলে কোনদিন উপলব্দি করতে পারা যায় না শহরের মানুষের জীবনধারা। কারো কাছে গিয়ে
যদি আবদার করেছি বাড়ির ছাদে উঠবার- নিঃসংকোচে নিয়ে গেছেন বাড়ির ছাদে। জিজ্ঞেস
করেছি খাবার বা শখের জিনিসের দোকানের সন্ধান একজন ও বলেন নি “জানি না” হাসিমুখে সব
দাবি পূরণ করেছেন। ভারতীয় কিছু শহরের অদ্ভুত সমস্যা হচ্ছে এখানে আমিষ বা নন-ভেজ
খাবার প্রায় পাওয়াই যায় না। যোধপুর এরকম একটি শহর। বেতাল ঘোরাঘুরির পর বাঙ্গালির
ক্ষুধা মোকাবেলায় তাই কয়েক মাইল অতিরিক্ত পার হয়ে যেতে হল রেল স্টেশান এ। এখান
থেকে ঠিক করলাম আমরা যাব উমাইদ ভবন।
উমাইদ ভবন নিয়ে
কয়েকটি তথ্য খুবই ব্যাতিক্রমী। প্রথমত উমাইদ ভবনে যোধপুরের রাজ পরিবার এখনো থাকেন।
এটি কমলা পাথরের তৈরি একটি ইতালীয় ঘরাণার স্থাপত্য। রয়াল ইন্সটিটিউট অব ব্রিটিশ
আর্কিটেক্টস এর প্রধান এর নকশায় ১৫ বছর ধরে প্রায় ৩০০০ শ্রমিক এটির নির্মান কাজ
শেষ করেন। উমাইদ ভবনকে অল্পকথায় বলা যায়- রাজস্থানের শ্রেষ্ঠ মরুদ্যান। ভবনটি
শুরুতে রাজপরিবারের বাসস্থান হিসাবে নির্মিত হলেও বর্তমানে বাড়ির একটি অংশকে
নামকরা পাচতারকা হোটেল হিসাবে পূণবিন্যাস করা হয়েছে। এর সাথে যোগ হয়েছে রাজবংশের
নিজস্ব জাদুঘর। রাজপরিবারের ইতিহাস ও ঐশ্বর্য্য নিশ্চিতভাবে চোখ ধাঁধিয়ে দেবে।
এমনকি অবাক করে দেবে প্রযুক্তির ব্যাপারে তাঁদের সৌখিন মনোভাব ও। রাজপরিবারের এই
জাদুঘরে ৩০ ফিট বাই ৫০ ফিট এর একটি ঘর জুড়ে রয়েছে শুধু তাঁদের শখের ঘড়ির কালেকশান।
গ্রান্ডফাদার ক্লক থেকে সোনায় বাঁধানো পকেট ওয়াচ কী নেই সেখানে! শত শত ঘড়ির
সেকেন্ড এর কাটা আর পেন্ডুলাম একসাথে দুলে দুলে শুধু সময় গড়ানোর সাক্ষ্যই দিচ্ছে
না, মনে করিয়ে দিচ্ছে যুগ যুগ ধরে চলে আসা পারিবারিক ঐতিহ্য ও আভিজাত্যের চর্চার
বয়সকালটাও। রাজপরিবারের টাইমলাইন সম্পর্কে ধারণা পেতে এ বাড়ির প্রদর্শনী
গ্যারেজটিও নেহাৎ মন্দ নয়। প্রতি দশকে রাজপরিবারের শ্রেষ্ঠ গাড়িগুলাওকে সাজিয়ে
রাখা হয়েছে এখানে। ৩০ এর দশকের রোলস রয়েস, ৬০ এর দশকের ক্যাডিলাক বা ৮০ এর লিমিটেড
এডিশান মার্সিডিজ বেঞ্জ জানাবে- ভারতবর্ষের আভিজাত্য রাজপরিবার নিজেদের মধ্যে লালন
করেছে সব সময়ই। সাম্প্রতিককালে প্রিয়াংকা চোপড়া ও নিক জোনাস এর বিবাহোত্তর
সংবর্ধনা আয়োজন করে উমাইদ প্যালেস হোটেল। আর উমাইদ ভবনের দ্বিতীয় বিশেষত্ব হল-
ভারতের সংবিধান অনুসারে উমাইদ ভবন স্টেট একটি সম্মানসূচক ফেডেরাল ল্যান্ড যা
নিজস্ব পতাকা উত্তোলন করার অধিকার রাখে। প্রাচীন সম্ভ্রান্ত পরিবারের মত উমাইদ
ভবনে বসবাসকারী পরিবারের রয়েছে আর্দালী থেকে শুরু করে বাটলার পর্যন্ত।

উমাইদ ভবনের ভেতরে (ছবিঃ নওফেল শরীফ সজল)
রাজপরিবার এর
প্রভাব ও প্রতিপত্তির সাক্ষ্য দিতে আরেকটা গল্প বলা যেতে পারে। বিংশ শতকের প্রথম
দিকে উমাইদ ভবনের তৎকালীন কর্তা মহারাজা উম্মেদ সিং ভারতের প্রথম পাইলট হিসাবে
বিমান চালনা শিখে আসেন। তাঁর নেতৃত্ব ও আগ্রহেই ১৯২০ সালে যোধপুর ফ্লাইং ক্লাব
স্থাপিত হয়। একভাবে এটাকেই বলা যায় ভারতবর্ষের প্রথম বিমানবন্দর। দ্বিতীয়
বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মিত্রবাহিনীর রয়াল এয়ারফোর্স এর বিমানঘাটি ছিল যোধপুর। পরবর্তীতে
স্বাধীন ভারতের বিমানবাহিনীর এয়ারফিল্ড ও ফ্লাইং স্কুল হিসাবেও যোধপুর এর এই
বিমানবন্দরটি ব্যাবহার করা হয়। বর্তমানে এটি সিভিল এনক্লেভড বিমানবন্দর হিসাবে
চালু রয়েছে।
যোধপুরের
প্যারাডক্স কথাটা এখনো দুইবার বলে ফেলেছি। প্যারাডক্স টার সৌন্দর্য্য মনে হয় এখানে
যে- এত ইতিহাস, ঐতিহ্য আর শান শওকাত থাকা সত্ত্বেও রাজপরিবার হয়ে উঠেছে ব্যাবসায়ী
পরিবার, দূর্গ ছেড়ে গড়ে উঠেছে রাজবাড়ি। সেটাও বদলে গেছে জাদুঘরে। কিন্তু সাধারণ
মানুষের জীবন রয়ে গেছে এখনও একই রকম। রঙিন, সাধারণ ও নিস্তরঙ্গ। যোধপুর এর নীল
ঘরের পাশ দিয়ে চলে যাওয়া ইট বিছানো পথে এই শান্তির ছোয়াটা আর নীল রঙের উপরে পড়ে
থাকা সোনালি রোদটা বোধহয় রাজপুতদের গর্বের মতই উজ্জ্বল। কিন্তু তাঁর চেয়ে অনেক
বেশি চিরায়ত।
This feature was published in Natunbarta.com on 1st July 2019
The link of the published article is:
https://bit.ly/32437vi
This feature was published in Natunbarta.com on 1st July 2019
The link of the published article is:
https://bit.ly/32437vi
Comments
Post a Comment