Skip to main content

ভারতকল্প-১- রাজধানী এক্সপ্রেসঃ নিজামউদ্দিনের শহর!

“রাস্তা থামায় দিল, রাস্তা থামায় দিল আউলিয়া...
এল দিল্লীতে নিজামউদ্দিন আউলিয়া এলো...”

চন্ডিগড়ের রাস্তা থেকে দিল্লীর বুকে যখন পা রেখেছি তখন আড়াইটার ঘর পার হয়ে মিনিট এর কাঁটা রাত তিনটার দিকে যাত্রা শুরু করেছে। বাসে চলতে থাকা বাংলা গান এর লাইনগুলো মাথার মধ্যে কেন বেজে চলেছে তার কারণ ভাবতে ইচ্ছা করছে না। মানসিকভাবে একটু বিরক্ত লাগছে কারন এই দুই লাইনের পরের দুই লাইন ঘুমে জড়সড় চোখ নিয়ে মনে আসতে চাইছে না । কেমন একটা ঘোরলাগা অবস্থা। দিল্লীর পাহাড়গঞ্জ এর আরাকাশান রোড এর হোটেলগুলো ঘুমিয়ে পড়েছে। শুধু ঘুমায় না তাঁদের গায়ে লেগে থাকা নিয়ন বাতিগুলো। ঘোরলাগা- মন মানসিকতা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে সেগুলোর চোখে পীড়া দেয়া লাল, নীল সবুজ রঙ। আধাঘন্টার মধ্যে কীভাবে হোটেল এ ৪৪ জন মানুষের চেক ইন, লাগেজ রুমে রুমে পৌছে দেয়া হয়ে গেল টের ও পেলাম না। রুম শেয়ার এর চার্ট আগে থেকেই করা থাকায় কিছুক্ষণ পরেই মাঘ মাসের ত্রাহি ত্রাহি শীতের মধ্যে কম্বলের আরাম এ তলিয়ে গেলাম। আগামীকাল দিল্লী অভিযানে বের হওয়া হবে হয়তো। সকালে উঠে একটা প্ল্যান করতে হবে। অনেক নাকি দেখার জায়গা। এসব বিচ্ছিন্ন চিন্তাভাবনাতে এলোমেলো হয়ে ঘুমিয়ে গেলাম।
ঘুমের স্থায়িত্ব হল মাত্র দেড় দুই ঘন্টা। দরজায় টোকা দিচ্ছে কে যেন। পিট পিট করে চোখ মেলে পরিস্থিতি বুঝতে চেষ্টা করলাম। প্রথমেই যা খেয়াল করলাম আমার তিন রুমমেট টোকায় ঘুম থেকে জেগে ওঠার বদলে আরো গভীর ঘুমে তলিয়ে যাচ্ছে। খুব বেশি হলে হালকা কুচকে উঠচ্ছে ভুরু কারো কারো অসময়ে ঘুম এর ব্যাঘাত ঘটায়। দরজা খুলতে দেখি সাদিয়া দাঁড়িয়ে আছে। কাধে ক্যামেরা। পরণের জামাকাপড়ে পরিষ্কার যে ঘুরতে যেতে একদম প্রস্তুত। চোখ কচলাতে কচলাতে জিজ্ঞাসা করলাম-“কী ব্যাপার? ঘুমাচ্ছিস না? এত ভোরে কোথায় যাচ্ছিস?” আমাকে কোন ধরনের পাত্তা না দিয়ে বলল এক্ষনি রেডি হ। বাইরে যাচ্ছি। আমার মাথা এই ধরনের পরিস্থিতে কাজ করে না। ঘুম চাই। প্ল্যান চাই। বের হবার একটা রুট চাই মাথার ভিতরে। সেসব তো নেই ই, তার উপরে তীব্র শীত। পেছনে আরো ছয় সাতজনের একটা দল তাকিয়ে আছে দেখে বুঝলাম এসব বলতে যাওয়া বৃথা। দুনিয়া ঘুরতে এদের সাথে বের হলে কিছু সময় এভাবেই বের হতে হবে।
আমরা দেখতে যাচ্ছি নিজামউদ্দিন এর দরগাহ। এত ভোরে যাওয়ার কারণ জায়গাটার ধর্মীয় গুরুত্ব। ভারতীয় উপমহাদেশ এর ধর্মচর্চার বড় অংশ নিয়ে সূফীবাদ এর বিচরণ। এ অঞ্চলে যে কয়জন এই সূফীবাদ এর প্রচ্ছদ হয়ে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের ধর্মচর্চা, জীবনবোধ ও মানবিকতার প্রয়োগ এ স্থান করে নিয়েছেন তাঁদের মধ্যে হজরত সৈয়দ নিজামউদ্দিন আউলিয়া থাকবেন উপরের দিকে। এ কারণে প্রতিদিন দলে দলে লোক এসে ভীড় জমায় তার দরগায়। মাজার এর সংস্কৃতি আর স্রষ্টার ইবাদত কতখানি সম্পৃক্ত সেটা নিয়ে তর্ক হতে পারে বিস্তর। তবে অস্বীকার করবার উপায় নেই যে দক্ষিণ এশীয় বিশেষ করে ভারতীয় মুসলমানদের সামাজিক বন্ধন আর ঐক্যের প্রতীক হিসাবে মাজারগুলো বিশাল গুরুত্ব বহন করে। সৈয়দ নিজামউদ্দিন এর মাজার এ যাবার আগে যে সামান্য সময় লেখাপড়ার সুযোগ পেয়েছিলাম সেখানে হঠাত নজরে আসে যে নিজামউদ্দিন আউলিয়া হিসাবে আত্মপ্রকাশ করবার আগে ডাকাতি করতেন। নিজাম ডাকাত এর নিজামউদ্দিন আউলিয়া হয়ে ওঠার ঘটনার অনেক ধরনের বর্ণনা রয়েছে। তবে ইতিহাস নিজামউদ্দিনকে মনে রেখেছে একজন সহনশীল, ধর্মীয় ভাতৃত্ববোধ এ পূর্ন এবং সর্বোপরি একজন মরমী সাধক ও ধর্মগুরু হিসাবে।
Dargah Hazrat Khwaja Syed Nizamuddin
ভোরের আলোয় নিজামউদ্দিন আউলিয়ার দারগাহ। ছবি কৃতজ্ঞতাঃ thesufi.com
ইতিহাস যদিও লিখে বিজয়ীরা। ইতিহাস সেই যুগে লিখতেন রাজা-বাদশাহ-সুলতান ও সম্রাটদের দরবারের বাহাদুরেরা। হজরত নিজামউদ্দিন নিজে সব সময় রাজা বাদশাহদের সংসর্গ এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করতেন। নিতান্ত বিপদে না পড়লে বা বাধ্য না হলে কখনো রাজ দরবার মুখো হন নি। দিল্লীর প্রতাপশালী মুঘল সাম্রাজ্যের অনেক আগে, প্রায় ২০০ বছর আগে তিনি ধর্ম ও আধ্ম্যাতিকতার চর্চা করেছেন এই জনমানবে ভরে ওঠা শহরে। এই শহরকে কেন্দ্র করে রাজত্ব করেছে কয়েক প্রজন্ম ও বংশীয় রাজপরিবার। তাঁদের বেশিরভাগ আবার বিদেশী। আর শেষে এই নিজামউদ্দিনকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে সম্রাটদের শাসিত দিল্লী।
নিজামউদ্দিন এর দরগাহ বলতে যে জায়গাটিকে বুঝায় সেটি আসলে একটি লাল রঙ এর মসজিদ আর সাদা রঙ এর সমাধি। পারস্যের স্থাপত্যশৈলির সাথে যোগ হয়েছে মূঘল পূর্ববর্তী নির্মান সামগ্রী আর মুঘলদের স্থাপত্য আকার। যদিও মুঘলদের অন্যান্য স্থাপত্য পূরাকীর্তির মত বিশাল এলাকা নিয়ে সংরক্ষণ করা যায় নি জায়গাটা। দরগাহ এর বাইরে লম্বা ঘুরপথ ধরে গড়ে উঠেছে ব্যাবসা। টুপি, আতর, মেসওয়াক আর সুগন্ধী ফুল এর ভীড়ে রয়েছে আরেক অদ্ভুত ব্যাবসা। জুতা জমা রাখা। লম্বা রাস্তা জুড়ে হেঁটে যাবার সময় সবাই হাক দিতে থাকে জুতা জমা রেখে যাবার আহবানে। সবাই প্রতিশ্রুতি দেয় জুতা জমা রাখতে কোন টাকা পয়সা চাইনা তাঁদের। তবে এসবে কান না দিয়ে জুতা হাতে নিয়ে ভিতরে এগিয়ে গেলাম। স্থাপত্যের সামনে যথেষ্ট জায়গা না থাকায় জিনিসটার বিশালত্ব এখন আর পুরোপুরি অনুভব করা যায় না। সমাধির লাগোয়া মসজিদ এর গঠন চরিত্রটাও হয়তো একটা আরেকটাকে ঢেকে রেখেছে অনেকখানি।
The Dargah of Hazrat Nizamuddin Aulia,New Delhi
চিত্রকর রবি ভার্ত্রার চোখে নিজামউদ্দিন এর দরগাহ
ছবি কৃতজ্ঞতাঃ Painters Online UK
পথে দেখা মিলবে কিছু হিন্দীভাষী গাইড এর। তারা বারে বারে জানাবে যে তাঁদের সাহায্য না নিলে এই বিশাল এলাকায় কিছুই বোধগম্য হবেনা। তাঁদের সাহায্য সরাসরি না নিলেও তাঁদের বলা দু একটি গল্প কানে চলে আসে। দিল্লী সালতানাতে গিয়াসউদ্দিন বলবন ছিলেন এক পাগলাটে সম্রাট। ভয়াবহ কঠোর মনোভাবের কারণে তাঁর রাজদরবারে কারো ডাক পড়লেই মনে করা হত ব্যাপারটা শেষ হবে কারো প্রাণহানিতে। মুসলিম শাসকেরা তখনও ভারতীয় উপমহাদেশে নতুন। তাঁরা নিজ ধর্মের শ্রেষ্ঠত্বের পতাকা হাতে আর বিশ্বাস মনে নিয়েই উপমহাদেশ জয়ের স্বপ্নে এসেছিলেন। সুফলা ভূমি আর অশেষ ক্ষমতা করায়ত্ব করেছিলেন এবং ইসলামকে একটা পর্যায় পর্যন্ত জোর করেই স্থানীয় মানুষদের কাঁধে চাপিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। তবে সুফী সাধকদের প্রতি তাঁদের একটা দূর্বলতা ছিল। ধর্মের প্রচার প্রসার সালতানাত এর ক্ষমতা বৃদ্ধি করত বলেই তাদেরকে সম্রাট ও সুলতানেরা সাহায্য করেছেন অনেকবার। কিন্তু নিজামউদ্দিন ছিলেন একটু অন্যরকম। তিনি মহানবী (সা) এর বংশধর হলেও জন্মসূত্রে স্থানীয় হিসাবেই মনে করতেন নিজেকে। তাই ধর্মের ব্যাপারে ভেদাভেদ করতেন না নিজে ধর্মীয় সাধক হবার পরেও। মানবপ্রেম এর কথা বলতেন সব ভেদাভেদ পার হয়ে। বলবন এর সামনে এসব অভিযোগ নিজে গিয়ে খন্ডন করে আসেন নিজামউদ্দিন ইসলামের ইতিহাস, হাদিস এর রেফারেন্স আর সোলায়মান (রা) এর জীবন থেকে পাওয়া প্রেরণা নিয়ে। বলবন ও তার সভাসদেরা শুধু তার জ্ঞান ও পান্ডিত্যে খুশীই হন নি, কিছুটা হলেও ধর্মীয় সহনশীলতাই যে ধর্মকে বাড়তে সাহায্য করবে সেটা বুঝতেও পারেন।
মুঘলদের সাথে ধর্মবিশ্বাস যতটা বিশুদ্ধ ইসললামের চর্চা হিসাবে সম্পৃক্ত, তার চেয়ে বেশি সম্পৃক্ত আধ্ম্যাতিকতার সাথে। মুঘলরা ইসলামের জনপ্রিয়তাকে নিজেদের জন্য একটা সুবিধা হিসাবে ব্যাবহার করেছেন সব সময়। অন্য ধর্মের মানুষদের সাথে নিজের ধর্মের মিশেল ঘটাতেও আকবরের মত সম্রাট এর ভূমিকা রয়েছে। তারা সুফীবাদকে বিশেষ করে নিজামউদ্দিন এর মত সহনশীল সুফীবাদ ও ইবাদত বন্দেগীর পাশাপাশি নিজেদের আধ্ম্যাতিকতার চেতনা অন্য ধর্মের মাঝেও ছড়িয়ে দেয়া এবং পেশি না খাটানোর চিন্তাকে সব সময় লালন করেছেন। দিল্লীতে রাজধানী স্থাপন এর পিছনেও ততদিনে পরলোকগত নিজামউদ্দিন এর ধর্মীয় প্রভাব ও ইসলামের প্রতি স্থানীয়দের দূর্বলতাকে ব্যাবহার করেছেন মুঘলরা। নিজামউদ্দিন একজন আউলিয়া নন শুধু, একটি জায়গাও যেখান থেকে ভারতে মুঘল শাসন পুরো উপমহাদেশ জুড়ে ডালপালা বিস্তার করতে পেরেছিল।
আধুনিক দিল্লীর স্থাপত্য ও ট্যুরিস্ট ম্যাপটাকেও তাই বেশ প্রভাবিত করেছে মুঘলদের এই নিজামউদ্দিন প্রীতি। এখানেই সম্রাট হুমায়ুন গড়ে তুলেছিলেন তাঁর দিনাপানা। হুমায়ুন এর সারাজীবনের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী শেরশাহ শুরীর প্রিয় সভাসদ ঈশা খান নিয়াজিকে সমাহিত করা হয় দরগাহর পাশেই। এর প্রায় ১৪ বছর পর হুমায়ুন দিল্লীর সাম্রাজ্যের সম্রাট হিসাবে অধিষ্ঠিত হন ও অল্প কিছুদিনের মধ্যেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তার সমাধিও রয়েছে খুব কাছেই। এছাড়া বু হালিমা নামের আরেক গুরুত্বপূর্ণ নারীর সমাধিও এই একই জায়গায়।

একদিকে দিল্লীর প্রতাপশালী মুঘলদের দ্বিতীয় সম্রাট এর বিশাল সমাধি আর রাস্তার অন্যপাশে নিজামউদ্দিন এর দরগাহ এর মধ্যে কি প্রবল বৈপরীত্য। মুঘলরা বিলুপ্ত হয়ে গেছে।সব বর্ণের ট্যুরিস্ট দের ভীড় জমেছে সেখানে। যারা আসেন ভারতভ্রমনের সিল আর স্মারক দেখতে। অন্যদিকে  নিজামউদ্দিনের দরগাহ এখনো জনমানুষের প্রবল জমায়েত এর জায়গা। দিনের আলো বাড়তেই ভিড় এ আর পা ফেলা যায় না। এরা আসেন শুধু অন্তরের শান্তির সন্ধানে। বিশ্বাস এর মূল্য দিতে। ভক্তি জানাতে। দুই পাশের দুই স্থাপত্যের মধ্যের মোড়টা যেন ভারতবর্ষের সমৃদ্ধ আর রাজকীয় অতীতকে একদম চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিতে দিতে চায়। দিল্লীর বিখ্যাত পায়রার ঝাক এখানে পুরোপুরি স্বাধীন তারা উড়ে বেড়ায় এসব চিন্তার অনেক বাইরে। চক্রাকার বের হবার পথ পার হয়ে আবার বের হতেই নাকে এসে ধাক্কা দেয় গরুর মাংসের টাটকা ঘ্রাণ। ভারতে ভেজ-নন ভেজ এর চক্করে পড়ে খাদ্য বিষাদে আক্রান্ত আমরা রওনা দেই সেই ঘ্রান এর পিছে পিছে।
নিজামউদ্দিন এর দরগার বাইরে দিল্লীর বিখ্যাত পায়রার ঝাঁক. ছবিঃ সাদিয়া তাসনিম
দিল্লী শহরে এর ফাকে সকাল হয়। রোদ ওঠে। মেসওয়াক, ফুল, আতর আর রান্না হতে থাকা গরুর মাংসের ঘ্রাণ এর সাথে মিশে যায় সিলসিলার নেশায় বিভোর মানুষের মাহফিল এর আওয়াজ। গান এর আসর থেকে মিলাদের আওয়াজ মিলে সে এক অদ্ভুত মিশ্রণ। এসবের মধ্যে কীভাবে যেন পরের দুই লাইন মনে পড়ে গেল-
“ধন্য ধন্য মেরা
ধন্য ধন্য মেরা
সিলসিলা…

এলো দিল্লীতে নিজামউদ্দিন আউলিয়া”

This feature was published in: Natunbarta.com @ 10/06/2019

Comments

Popular posts from this blog

ভারতকল্প ৩.২- ভুতুড়ে স্বাধীনতা (২)

মর্গ থেকে বেড়িয়ে গাড়ির ভেতরে সবাই একটু ঘোরগ্রস্থ। একই নেটওয়ার্কে চারটা মোবাইলের আলাদা জিপিএস আমাদের হার্টবিট বাড়িয়ে দিচ্ছে। পিউলির অবশ্য এক্সেলারেটরের পা উঠে যায় নি। গাড়ি চলছেও সেই ঘোরের মধ্যেই। এর মধ্যে জানে পানি আসার মত জিপিএস ঠিকমত লোকেট করে ফেলল সবাইকে। রেডিও সিগনাল ও ফেরত এসেছে। মর্গ এর ব্যাপারটা ভুলে থাকার চেষ্টা করতে করতে জায়গামত এসে পৌছে গেলাম আমরা। এই সেই জাপানী ভদ্রলোকের বাগান। দেখে মনে হয় ইঞ্চি ইঞ্চি করে তৈরি করা। অথচ প্রকৃতি থেকেও আলাদা হয়ে যায় নি। আর ওই দূরে ভারত মহাসাগরের কাচের মত নীলাঞ্জনা হীরার মত পানি! এক চিলতে সাগরপাড় দেখা যাচ্ছে। বহু বহু নিচে! সেখানে কষ্টিপাথরের মত শৈবাল থেকে আসা কাল পাথর জমাট বেধে আছে কিছু। এই দেখতেই না এতদূর এত পথ ঘুরে আসা! সাগরপাড়ে নেমে যাওয়ার সেই ভয়াল রাস্তা!  নিচে নামার ব্যাপারটা অবশ্য নিজেই একটা আলাদা জার্নি। আড়াই ফিট চওড়া সিড়ি আছে একটা। তাঁর কোন রেলিং নেই। ঘুরে প্যাচ খেয়ে নেমে গেছে সৈকতে ঠিকই। তবে তাঁর পরতে পরতে আবার ছোট ছোট এডভেঞ্চার! কোথাও পাথর কেটে দরজা তৈরি করে চলে গেছে সিড়ি, তো কোথাও সিড়ির দুইপাশে আগুনে পুড়ে যাওয়া গাছের ছা...

ভারতকল্প ৩.১- ভুতুড়ে স্বাধীনতা!

চন্ডীগড় শহরে স্থাপত্য দেখার ব্যাপারটা প্রায় কর্তব্য। সেই কর্তব্য পালনের ছকের মধ্যে আরেক কর্তব্য ছিল সেখানকার আর্কিটেকচার স্কুল ঘুরে দেখা। এই দেখার ফাকে একজন শিক্ষক জানতে চেয়েছিলেন- “এই যে ৪০-৪২ দিনের ভারত দেখে বেড়ানোর বিশাল আয়োজন, এর মধ্যে কোন শহরে কতদিন বরাদ্দ?” ৪০ দিনের বাধা ছকে গোয়া’র জন্য বরাদ্দ পাঁচদিন শুনেই মুখ টিপে হেসেছিলেন অনেকে। গোয়া যেন ভারত মহাসাগরের তীরে স্বাধীনতার ডাক (ছবিঃ সেহরান পারভেজ সিয়ান) আমরা ভারতবর্ষে প্রথম ঘুরতে আসা স্থাপত্য ব্যাচ নই। এই ঐতিহ্য ঠিক কতদিনের পুরাতন তা নিয়ে বেশ একটা ধোয়াশা আছে। তবে বছরের হিসাবে ৩০ এর কম তো নয় ই। এমনকি আমাদের সবচেয়ে প্রবীণ শিক্ষক ও তার ভারতভ্রমণ এর রেফারেন্স টানেন ঐতিহাসিক স্থাপত্য পড়াতে। গোয়া শহর নিয়ে শুধু চন্ডীগড়ের শিক্ষকেরা নন শুধু আমাদের নিজেদের মধ্যেও বাড়তি উত্তেজনা স্পষ্ট। গোয়া হচ্ছে- স্বাধীনতার নগর! মুম্বাই এর মত কসমোপলিটান নয়, কক্সবাজারের মত বিশ্বের বৃহত্তম সৈকত ও নয়, গোয়া শহর এর স্বাধীনতা একটা সাগরকণ্যা ছোট শহরে দাঁড়িয়ে সাগরপাড়ের জীবনের সর্বোচ্চ স্বাধীনতার হাতছানি! কী না কী হবে সামনে! কত কত গল্প শুনে যাচ্ছি, তা...