Skip to main content

Posts

Showing posts from August, 2019

৪০৯ বসন্তের নগরী । প্রথম পর্ব । রূপলালের জলসায়

অনবরত স্কেচবুকের পাতায় মসৃন পাশে পেন্সিল ঘষে যাচ্ছি। কাজটায় কেমন একটা অতৃপ্তি আছে। পেন্সিল চলার কথা কাগজের অমসৃণ পাশে। সামনে “বেংগল আর্কিটেকচার” এর ক্লাস চলছে। প্রফেসর অনেক আগ্রহ নিয়ে বলে যাচ্ছেন কিছু একটা। মনোযোগ নেই আমার তেমন। আমি ভয়াবহভাবে অন্যমনষ্ক। অন্যমনষ্কতার মধ্যে অন্যমনষ্কতা বলে কোন ব্যাপার আছে কীনা জানি না বা মূহুর্তকালের জন্য মনোযোগ ফেরত আসার মত একটা সময়ে কয়েকটা কথা কানে ঢুকে গেল- “বুড়িগঙ্গা নদীতে শুধু বিলাস জাহাজ নয়, বাণিজ্যিক জাহাজ ও ঢুকত সে সময়ে। জাহাজিরা মুগ্ধ হয়ে যেত চারটি আলাদা ঘাটসহ বাড়িটার চেহারা দেখে। আর্মেনিয়ান, বৃটিশ আর ঢাকার ক্লাসিক চেহারা মিলিয়ে সে বাড়ি আসলেই ছিল দেখার মত। ক্লাসিক আর্কিটেকচার পড়িস? মুগ্ধতা আসে গোথিক বা রোমান বিল্ডিং এর চেহারা দেখে? চিন্তা করে দেখ ওই সাদা চামড়ার ইউরোপিয়ানরা মুগ্ধ হত এই বাড়ি দেখে। কিন্তু তোরা যেন কেমন। কোন কিছুতেই অবাক হস না।“ কোন সে বাড়ি যেটা বুড়িগঙ্গার পাশ দিয়ে দেখা যায়? আমার পাশে পুরাতন ঢাকার ইফতি বসে আছে। ওকে পেন্সিলের মাথা দিয়ে হালকা গুতা দিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম- -এটা কই রে? -ফরাসগঞ্জে। শ্যামবাজারের দিকে। -অনেক বড় বাড়ি ...

টাইগার্স নেস্টঃ পাইন বনের লোকগাথায়

-“যখন কিওক্রাডং এ উঠি ২০১২ সালে আসলে এত সময় লাগে নি” কথাটা স্বগোতক্তির মত বললেও অর্থীকেই বলা। অর্থী চার বা পাঁচ কদম সামনে পরের বাঁকটার কোন বিকল্প পথ আছে কী না খুঁজতে ব্যস্ত। আমরা উঠছি “টাইগার্স নেস্ট” এর চুড়া বরাবর। ভূটান আসার আগে ভূটান নামে লিখে গুগলে অনুসন্ধান চালাই বা পোস্টকার্ড বই এর মারফতে যাই জানতে চেষ্টা করি এই টাইগার্স নেস্ট আসবেই। পারো এমনিতেই তর্কসাপেক্ষে ভূটান এর সবচেয়ে সুন্দর শহর। তার সাথে টাইগার্স নেস্ট এ ওঠার বাসনাতে এই মৌসুমে প্রচুর ভ্রমণ পিপাসু লোকজন পারোতে ভিড় জমিয়েছে। আমরা ৩২ জন ও সেই ভিড় এর ই অংশ এবং এই মুহূর্তে ৩২ জনই ভূটানে আসার সবচেয়ে বড় কারণগুলোর একটি পূরণ করতে ব্যস্ত। এর মধ্যে দেখলাম অর্থী বিকল্প রাস্তা না পেয়ে বাঁকটা পুরো হেঁটে ওঠার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমিও তাই করলাম। আমাদের দুজনের জন্য আসলে পায়ে হেঁটে উপরে ওঠার চেষ্টাটা আসলে গোয়ার্তুমি অনেকের চোখে। আমাদের কাছে এটা একটা ব্যক্তিগত চ্যালেঞ্জ এর মত। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ঝাড়া তিন হাজার মিটার উঁচুতে জায়গাটা। পারো ভ্যালির যে জায়গাটা থেকে আমরা এই যাত্রা শুরু করেছি সেখান থেকেও উঠতে হবে প্রায় তিন হাজার ফুট। জিপিএস এর মা...

ভারতকল্প-২- নীলরঙ্গা যোধপুর!

১০ দিন আগে মানালিতে মাইনাস ১৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পাচ ছয়টা জ্যাকেট পড়ে কাঁপাকাঁপি চলছিল। মাত্র ১০ দিন! বাসের জানালার বাইরে এখন সোনালি আভা চকচক করছে। হাফ হাতা টি শার্ট পড়ে এসির বাতাসে কাঁপছি একটু একটু ঠিকই। কিন্তু সোনালী রোদ আর বালু মিলে মিশে চোখের দেখার জন্য পরিবেশ তৈরি করছে তাতে ঠান্ডার লেশমাত্র নেই।১০ দিনে বরফ থেকে মরু চলে আসার ব্যাপারটা এতটাই আশ্চর্যজনক যে, শত চিন্তা করে ভারতবর্ষ কত বড় ব্যাপারটা মাথায় ঢুকতে চেয়েও চায় না। পথে কোন জনমানব নেই। জীবনের অস্তিত্ব জানান দিতেই মাঝে মাঝে দুই চারটি মরুভূমির ছাগল উকি দিচ্ছে বাসের আশেপাশে। আমি আগে কখনো মরুভূমি দেখিনি। জীবনে এই ই প্রথম। ধূ ধূ সোনালী প্রান্তর এ হারিয়ে যাচ্ছে দৃষ্টি আর চিন্তার সীমানা। দু চারটা কাঁটা জাতীয় গাছের অস্তিত্ব সেই পথে বাধা দিতে পারছে না। রাজস্থান এর সাথে আমার পরিচয় “হঠাৎ বৃষ্টি” ছবির সাথে সাথে। লাল পাগড়ি পড়া ফেরদৌস এর উটে চড়ে যাওয়া আর “সোনালি প্রান্তরে, ভোমরার গুঞ্জনে...” গানে আমার বয়সীরা তো বটেই, সব বয়সের বাঙ্গালীর জন্যই রাজস্থান একটা রোমান্টিক স্বপ্নের মত। আমার মনে সেই সিনেমা থেকেই অনেক অনেক প্রশ্ন। আসলেই...

ভারতকল্প-১- রাজধানী এক্সপ্রেসঃ নিজামউদ্দিনের শহর!

“রাস্তা থামায় দিল, রাস্তা থামায় দিল আউলিয়া... এল দিল্লীতে নিজামউদ্দিন আউলিয়া এলো...” চন্ডিগড়ের রাস্তা থেকে দিল্লীর বুকে যখন পা রেখেছি তখন আড়াইটার ঘর পার হয়ে মিনিট এর কাঁটা রাত তিনটার দিকে যাত্রা শুরু করেছে। বাসে চলতে থাকা বাংলা গান এর লাইনগুলো মাথার মধ্যে কেন বেজে চলেছে তার কারণ ভাবতে ইচ্ছা করছে না। মানসিকভাবে একটু বিরক্ত লাগছে কারন এই দুই লাইনের পরের দুই লাইন ঘুমে জড়সড় চোখ নিয়ে মনে আসতে চাইছে না । কেমন একটা ঘোরলাগা অবস্থা। দিল্লীর পাহাড়গঞ্জ এর আরাকাশান রোড এর হোটেলগুলো ঘুমিয়ে পড়েছে। শুধু ঘুমায় না তাঁদের গায়ে লেগে থাকা নিয়ন বাতিগুলো। ঘোরলাগা- মন মানসিকতা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে সেগুলোর চোখে পীড়া দেয়া লাল, নীল সবুজ রঙ। আধাঘন্টার মধ্যে কীভাবে হোটেল এ ৪৪ জন মানুষের চেক ইন, লাগেজ রুমে রুমে পৌছে দেয়া হয়ে গেল টের ও পেলাম না। রুম শেয়ার এর চার্ট আগে থেকেই করা থাকায় কিছুক্ষণ পরেই মাঘ মাসের ত্রাহি ত্রাহি শীতের মধ্যে কম্বলের আরাম এ তলিয়ে গেলাম। আগামীকাল দিল্লী অভিযানে বের হওয়া হবে হয়তো। সকালে উঠে একটা প্ল্যান করতে হবে। অনেক নাকি দেখার জায়গা। এসব বিচ্ছিন্ন চিন্তাভাবনাতে এলোমেলো হয়ে ঘুমিয়ে গেলাম। ...